জেলা পরিষদ, রাজবাড়ী

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাণী

ফকীর আব্দুল জব্বার
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার

রাজবাড়ী জেলা পরিষদের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ তারিখে। গেলো দুটি বছরের পরিষদের সার্বিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন বের হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। সেই সাথে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমেই মানুষ জেলা পরিষদ সম্পর্কে জানতে পারবে, বুঝতে পারবে। পরিষদের ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের আদ্যোপান্ত উপাত্তসহ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার বিষয়টি সর্বসাধারণ জানতে পারবে। হয়তো কেউ প্রশংসা করে উৎসাহ জোগাবে অথবা কেউ সমালোচনা করবে। আমি ঐ সমালোচনা থেকে সংশোধন করে সমালোচনার দিকগুলো চিহ্নিত করে পরিষদকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশমুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম। গোয়ালন্দ ঘাটে ১৯৭১ সনের ২১শে এপ্রিল রোজ বুধবার ভোর ৪টায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে আমার পাশ থেকে চাচা ফকীর মহিউদ্দিন শহীদ হন। সেদিনই শপথ করেছিলাম দেশের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবো। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, এক মূহুর্তের জন্যে কখনও ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে বিচলিত হই নাই, হব না। আমি এ যাবৎ ২৯টি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংগঠন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, শশ্মান প্রতিষ্ঠা করেছি সকলের সহযোগিতা নিয়ে। বিগত ২০১৭ সনের জানুয়ারি মাসে দায়িত্বভার গ্রহণের পর ২১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচিত পরিষদ ও পরিষদের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কর্মচারীগণের সহযোগিতা নিয়ে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। সেই সাথে জেলার মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যগণের উপদেশ ও পরামর্শ আমরা নিয়মিত গ্রহণ করে থাকি। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ উন্নয়ন, সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাহায্য প্রদান, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপন, অসহায় অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, দারিদ্র বিমোচন, নারী উন্নয়ন, শিশুর স্বাস্থ্যসেবাসহ নারীর উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অসহায় দরিদ্র এবং অসুস্থ মানুষদের আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে জেলা পরিষদ তাদের জীবনমান উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছে। জেলা পরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং জেলার সকল মহলের নাগরিকগণ আমাকে এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করছেন। এ জন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের উন্নয়নের রূপকার। তাঁর উন্নয়নের রোল মডেল বিশ্ব দরবারে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমানে অগ্রযাত্রায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁরই উদ্যোগে প্রথমবারের মত সক্রিয় হয়ে উঠেছে জেলা পরিষদ। ফলে তৃণমূল পর্যায় সরকারের নানান উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তরান্বিত হয়েছে।
আজ আমার বয়স ৭০ পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি এখনও নিজের মধ্যে তারুণ্যের উদ্দীপনা অনুভব করি। মনে হয় এখনো দেশের জন্যে কিছুই করতে পারিনি। মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত রেখেছি। নিজেকে উৎসর্গ করেছি দেশের উন্নয়নে আজীবন কাজ করে যাবো।
আমি গর্বিত আমার বাবা মার জন্যে, যারা আজ দুজনই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু সকল সীমাবদ্ধতার পরেও ঐ দৌলতদিয়া ইউনিয়নের এক অজপাড়া গাঁয়ে আমাকে বড় করে তুলেছেন। আমার ছাত্রজীবন খুব সুখের ছিল না। আমি ছাত্র জীবন থেকেই একজন ব্যবসায়ী ছিলাম। কলেজের ছাত্র সংসদে ভিপি, সেক্রেটারী ছিলাম। মোট আট ভাই বোনের সংসার ছিল আমাদের। ছাত্র জীবন থেকেই নিজের খরচ চালানোর জন্যে নিজেই উপার্জন করতাম। কখনও বইয়ের দোকান। কখনও খবরের কাগজের দোকান করে নিজে চলতাম। ভাই বোনের পড়াশোনা চালাতাম। আমি গর্বিত আমি একজন শিক্ষক, শিক্ষক আমার পরিবারের সবাই স্ত্রী, তিন ছেলে মেয়ে।
আপনাদের দোয়ায় আমি আজ ইতিহাসের প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র মানুষের কাছে বর্তমান সরকারের অনুদানসহ বিভিন্ন সুবিধা আমি সশরীরে পৌঁছে দিই ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছি। ইন্শাআল্লাহ কোনো দুর্নীতির সুযোগ এখানে নেই। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন। সকল স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সকল শ্রেণীর আমলাকে সব ধরণের অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও জড়তা থেকে দূরে থাকার আহবান জানাই। পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমি সর্বদা স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আমি সকল ধরণের অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানী কমিয়ে জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনয়নে বদ্ধ পরিকর। এই ভাবে গরীব দুঃখী মানুষের পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আজীবন কাজ করে যাবো।
পরিশেষে সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার